সংসদ নির্বাচনের দুই মাসের মাথায় উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। গ্রামগঞ্জে বইছে নির্বাচনের আমেজ। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে হাটবাজার, রাস্তাঘাট। প্রস্তুত রয়েছেন প্রার্থীরা। এবার দেশের ৪৮১ উপজেলা নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবে ইসি। কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে এদিনই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
এর আগে চার ধাপে ভোটের সময় জানালেও তফসিল দেয়নি সংস্থাটি। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে আইন-বিধি সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। তফসিল ঘোষণার আগেই আইন-বিধি সংশোধনের কাজ শেষ করতে চায় ইসি। কেউ বলছেন, আইন-বিধির সংশোধন প্রক্রিয়া শেষ না করে তফসিল ঘোষণা করলেও নতুন আইন-বিধি প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না। তাই তফসিল ঘোষণার জন্য বৈঠক ডেকে তা স্থগিত করেছে কমিশন।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসির সভাকক্ষে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ২৯তম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ বৈঠক স্থগিত করে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি ফিরলে কমিশন সভার নতুন তারিখ নির্ধারণ হবে। এর আগে সভার আলোচ্যসূচিতে দুটি বিষয় রাখা হয়েছিল। একটি হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসংক্রান্ত। অন্যটি বিবিধ। সম্প্রতি ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে কমিশন চার ধাপে নির্বাচনের কথা বলেছে উপজেলায়। তফসিল দিতে ৪০ থেকে ৪২ দিন লাগে।
ইসির নির্বাচন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৪ মে প্রথম ধাপে ১৫৩টি, ১১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৬৫টি, ১৮ মে তৃতীয় ধাপে ১১১টি ও চতুর্থ ধাপে ২৫ মে ৫২টি-মোট ৪৮১ উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। দেশে উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা নিয়ে দোটানায় রয়েছে নির্বাচন কমিশনের । কোন ধাপে কোন উপজেলায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। এ নির্বাচনে অধিকাংশ উপজেলায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যেও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। আবার অনেক প্রার্থী ইসির কাছে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন। আবার অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। ইসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তফসিল ঘোষণার সময় কোন উপজেলায় ইভিএম এবং কোন উপজেলায় ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ হবে সে তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। তবে যে উপজেলায় ব্যালটে ভোট হবে, সেখানকার কেন্দ্রে সকালে যাবে ব্যালট পেপার।
ইসিসূত্র জানিয়েছেন, ইসির হাতে এখন দেড় লাখ ইভিএম আছে। এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম অকেজো। সদ্যসমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬০-৭০ আসনে ব্যবহারের জন্য ইভিএমগুলো প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেনি ইসি। এক সূত্র জানিয়েছেন, ইসির প্রাথমিক চিন্তায় রয়েছে একই জেলায় ইভিএম এবং ব্যালটে ভোট না করার বিষয়টি। যে জেলায় যে ধাপে ইভিএম হবে, সে জেলায় সব উপজেলায় ইভিএম। আবার যে জেলায় যে ধাপে ব্যালটে ভোট হবে ওই ধাপে ওই জেলার সব উপজেলায় ব্যালটেই ভোট হবে। এজন্য সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হবে। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ১০ মার্চ। পাঁচ ধাপের ওই ভোট শেষ হয় জুনে। আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শুরু হয় প্রথম সভার দিন। পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদ দায়িত্ব পালন করে।
মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণে ২৬ উপজেলা কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে বাকিদের প্রশিক্ষণ দেবে কমিশন।
দলীয় প্রতীক : ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে ভোটের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। আর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবার তিন উপজেলায় দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদ বাদে বাকি দুটি পদ উন্মুক্ত রাখে। এবার উপজেলায় নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।