জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মুছের ফেলার প্রতিবাদে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে আমরণ অনশন করা ছাত্রলীগের দুই নেতা অনশন ভেঙেছেন। আজ রোববার রাত পৌনে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলমের আশ্বাসে তাঁরা ডাবের পানি খেয়ে অনশন ভাঙেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে অনশন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনামুল হক। ওই দিন রাতে সংহতি জানিয়ে অনশনে যোগ দেন বাংলা বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপশিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম।
অনশন করা নেতাদের দাবিগুলো হলো বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননাকারীদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় আইনে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং দীর্ঘদিন পার হলেও জড়িত ব্যক্তিদের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদাসীনতা তদন্ত করতে হবে।
উপাচার্য মো. নূরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভায় বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র মুছে দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে অনশনকারীরা। যদিও সেটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ওপর নির্ভর করছে। তবুও আশা করছি, সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারব।
অনশনকারী ছাত্রলীগের নেতা এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভায় বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ও উপাচার্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে অনশন ভেঙেছেন। তবে ওই দিন জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা আবার কর্মসূচিতে যাবেন। এ ছাড়া শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সিন্ডিকেট সভায় বঙ্গবন্ধুর অবমাননাকারীদের বিচার না হলে ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে তিনি কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে সেখানে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের (অমর্ত্য রায়-ঋদ্ধ অনিন্দ্য) নেতা-কর্মীরা। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনা জানাজানি হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি দিতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেছেন, ২০১৯ সালে সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে যে আন্দোলন হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে ফারজানা ইসলামকে ব্যঙ্গ করে ওই দেয়ালে একটি গ্রাফিতি আঁকা হয়েছিল। করোনাকালে কে বা কারা সেই গ্রাফিতি মুছে সেখানে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি আঁকেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন চলছে। ওই দেয়ালের বাঁ পাশে বঙ্গবন্ধুর আরেকটি বড় গ্রাফিতি আছে। তাই তাঁরা দেয়ালে গ্রাফিতি এঁকেছেন। এখানে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নেই বলে দাবি করেছেন তিনি।