চলমান প্রকল্প দ্রুত শেষ করে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে এবং যথাযথ যাচাই-বাছাই করে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর-বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সেই চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে, যে গুলোর জন্য খরচ কম হবে। কারণ আমি মনে করি যত তাড়াতাড়ি আমরা সেগুলো শেষ করতে পারব তত বেশি সুবিধা পাব।’

বুধবার সকালে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় সভাপতিত্বকালে এসব বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘আমরা একটা প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পর এর ফলাফল পাই, তারপর আরেকটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের অনুরোধ করব এখন সবথেকে বেশি যেটা দরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেটা আমাদের বেছে নিতে হবে। এগুলো চিহ্নিত করতে হবে কোন প্রকল্পগুলো সামান্য কিছু টাকা দিলেই আমরা শেষ করে ফেলতে পারব। প্রকল্পগুলো যত দ্রুত শেষ করে ফেলা যায় ততই ভালো। কারণ, একটি প্রকল্প শেষ হলে তার ফলাফল আসে। আমরা লাভবান হই এবং নতুন প্রকল্প নিতে পারি।

তিনি বলেন, ‘কাজেই এখানে দীর্ঘসূত্রিতা যেন না হয় বার বার যেন প্রকল্প সম্পন্ন দেরি না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্পে পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকগুলো প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে, কিন্তু সেটা করার কোন সুযোগ নেই। সেটা কিন্তু হতে দেওয়া যাবে না। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়কে সেভাবে নির্দেশ দেওয়া হবে।

তিনি প্রকল্প পরিচালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কারণ, অনেক সময় দেখা যায় অনেককে প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয় যারা কাজটা ঠিকমত বুঝে উঠতে পারেন না বা মনযোগী হন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন কোন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা হাতে নিই সে সময় খেয়াল রাখতে হবে কোনটা আমার দেশের জন্য প্রযোজ্য এবং প্রয়োজন। অনেক সময় প্রকল্প পরিচালনার জন্য আমরা এডিবি বা বিশ্ব ব্যাংক বা অন্যান্য সংস্থা বা দেশ থেকে থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করি। এ সময় দেখা গেল অনেক বড় অংকের টাকা দিয়ে প্রকল্প নিয়ে আসা হলো।

সরকার প্রধান বলেন, নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি আবারও বলবো অহেতুক একটা প্রস্তাব আসলো বড় আকারের। সেটা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ না করে প্রতিটি প্রস্তাবের ক্ষেত্রে এটাই মাথায় রাখতে হবে সেখানে আমাদের কী পরিমাণ টাকা ব্যয় হবে। আমরা কী পরিমান ঋণ নিচ্ছি এবং সুদসহ কী পরিমাণ পরিশোধ করতে হবে এবং সেটা করার মতো আমাদের সক্ষমতা আছে কি-না এসব যাচাই বাছাই করা একান্তভাবে দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন তখন যেকোনো প্রকল্প গ্রহণ করি না। আগে চিন্তা করে দেখি কোনটা দেশের কাজে লাগবে আর কোনটা লাগবে না। এর থেকে মানুষ কতটুকু পাবে।’

তিনি আরও বলেন, অযথা টাকা ধার করা নয়, কারণ যা সুদসহ আমাকেই পরিশোধ করতে হয়। তাই এই বোঝা যাতে আমাদের কাঁধে না পড়ে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি যে প্রকল্প আমরা নেব সেটা আমরা ওই কাজের বা ওই এলাকার জন্য কার্যকর কিনা এবং এর থেকে সাধারণ মানুষ কী পরিমাণ লাভবান হবে সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া অর্থনীতিতেও কেমন গতি সঞ্চার হবে তাও দেখতে হবে।

বিশ্বে চলমান যুদ্ধপরিস্থির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি যে, যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে একটা চাপ আছে যার জন্য যথাসময়ে অর্থ হয়তো আমরা ছাড় করতে পারিনি। আর এই নির্বাচনের ডামাডোলে সবকিছু একটু ধীর গতিতে চলেছে। নির্বাচনতো সম্পন্ন হয়ে গেছে কাজেই এটা আর ধীরগতিতে চললে হবে না। এখন আরো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ যেটা আসবে ২০২৬ সালে আমাদের গ্র্যাজুয়েশন কার্যকর শুরু হবে। সেখানে আমরা কি কি সুবিধা পাব আর কোনটা আমাদের জন্য সবথেকে বেশি কার্যকর সেটা আমাদের বাছাই করতে হবে। আমরা সেভাবে কাজ শুরু করব। এর সাথে এলডিসি হিসেবে যে সুবিধাগুলো আমরা পেতাম সেগুলো অনেকগুলো কিন্তু আমরা পাব না, যদিও এগুলো প্রস্তাব করেছি ২০৩২ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে। এ বিষয়গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলো আমরা কীভাবে মোকাবেলা করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটি দেশের জন্য যুদ্ধের ফলাফল খারাপ। কারণ, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়, অনেক কিছুই আমরা উৎপাদন করি কিন্তু যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন কম হয় বা আমদানী করতে হয় সেসব পণ্যের মূল্য এবং পরিবহণ ব্যয় অত্যাতিক বেড়ে গেছে। তারপর ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়া এর একটা বিরাট চাপ আমাদের অর্থনীতির ওপর পড়েছে। এ সময় কোভিড-১৯ চলাকালীন বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া থেকে সরকারের কোভিড মোকাবেলার সাফল্যের উল্লেখ করেন তিনি।

সরকার প্রধান বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। এখানে মূল্যস্ফীতি একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি যদি প্রবৃদ্ধির থেকে কম থাকে তাহলে তার শুভফল মানুষের কাছে পৌঁছায়। মূল্যস্ফীতির কিছুটা আমরা লাগাম টেনে ধরেছি, আমাদের সামনে আরও কমাতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা পরিকল্পনার সাথে সাথে আমাদের এই চিন্তাও মাথায় রাখতে হবে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ ছাড় বা এর ব্যবহারের ফলে মূল্যস্ফীতি যেন আর না বাড়ে। বর্তমানে
যে মূল্যস্ফীতি আছে সেটা আমরা কীভাবে কমিয়ে আনব সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তার সরকার কৃষি, গ্যাস, বিদ্যুৎ-প্রভৃতিতে ভর্তুকি দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভর্তুকি ও আমাদের ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। কারণ, এক্ষেত্রে ভর্তুকি অনেকাংশে বাড়িয়ে ফেলায় মূল্যস্ফীতি ও বেড়ে গেছে। এখন আমাদের যেটা করতে হবে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে কত শতাংশ বাড়ালে আমাদের মূল্যস্ফীতিতে চাপ পড়বে না সেটা মাথায় রেখে আমাদের ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। আমরা চট করে বেশি বাড়াতে পারবো না সেটা মাথায় রেখে আমাদের চলতে হবে।

‘পাঁচ বছর টাইম ইজ টু শর্ট’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, কাজেই পাঁচ বছর আমি কাজ করে যাব দেশের জন্য। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছি। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে হবে। সরকার গঠন করার পরে দ্রুত আমরা বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি কারণ, নষ্ট করার মত সময় আমাদের হাতে নেই।

প্রধানমন্ত্রী ভাষণের শুরুতে বলেন, আমি জাতির কাছে ঋণী এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, বারবার তারা ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমি আজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব পেয়েছি। স্বাধীনতার সুফল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেন আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারি, স্বাধীনতার শুভফল যেন জনগণ পায় সেজন্যই আমাদের পথ চলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *