পরমাণু অস্ত্রে স্যাটেলাইট অকেজো করার অভিযোগ অস্বীকার রাশিয়ার

পরমাণু অস্ত্র দিয়ে স্যাটেলাইট অকেজো করার মার্কিন অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, রাশিয়া এখনো সেই সামরিক ক্ষমতা আয়ত্ত করতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে এখনো বিস্তারিত জানায়নি ওয়াশিংটন।

রাশিয়া মহাকাশে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের স্যাটোলাইট অকেজো করার ক্ষমতা আয়ত্ত করার চেষ্টা করছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এমন রিপোর্ট নিয়ে আমেরিকা ও সহযোগী দেশগুলিতে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। মার্কিন কংগ্রেসের রিপাব্লিকান সদস্য ও নিম্ন কক্ষের ইন্টেলিজেন্স কমিটির সভাপতি মাইকেল টার্নারের মন্তব্যকে ঘিরে প্রকাশ্যে চলে আসে।

রাশিয়া অবশ্য এমন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, মার্কিন রিপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে না জেনে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করবেন না। তবে মহাকাশে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ সম্পর্কে আমেরিকার সতর্কবাণীর পেছনে তিনি অন্য কারণ দেখছেন। ইউক্রেনের জন্য সে দেশের সহায়তার প্রস্তাব এখনো সংসদে অনুমোদন করাতে না পেরে মার্কিন প্রশাসন মরিয়া হয়ে যে কোনো ভাবে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে বলে পেসকভ পাল্টা অভিযোগ করেন। মার্কিন সিনেটের অনুমোদন পেলেও নিম্ন কক্ষে সেই বিল এখনো আটকে রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার প্রশাসনের শীর্ষ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে এখনো স্পষ্ট বক্তব্য না রাখলেও আলবেনিয়া সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন , ওয়াশিংটন সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে সে বিষয়ে আলোচনা করছে।

তিনি মনে করিয়ে দেন, রাশিয়া এখনো সেই ক্ষমতা আয়ত্ত করতে পারেনি। তবে রাশিয়ার হাতে সম্ভাব্য এই সামরিক ক্ষমতার বিষয়টিকে মার্কিন প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, বাইডেন মস্কোর সঙ্গে সরাসরি কূটনৈতিক যোগাযোগের অনুরোধ করেছেন। গোপনীয়তার কারণে বিস্তারিতভাবে বিষয়টি সম্পর্কে মুখ খুলতে না পারলেও কিরবি স্পষ্ট বলেন, যে এই মুহূর্তে কারো নিরাপত্তার কোনো হুমকি নেই।

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিউস ন্যাটো প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনে বলেন, বিষয়টি তার কাছে একেবারেই নতুন। তবে গোয়েন্দা সংস্থার সেই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হবে।

মহাকাশে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের সম্ভাবনা সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসন এখনো প্রকাশ্যে বিস্তারিত না জানালেও বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই জল্পনাকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। তাদের মতে, মস্কো সম্ভবত মহাকাশে পরমাণু বিস্ফোরণের মাধ্যমে একাধিকভাবে স্যাটেলাইট অচল করে দেওয়ার প্রযুক্তি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। এমন হুমকির মাধ্যমে গোটা বিশ্বে যোগাযোগ, পর্যবেক্ষণ, গোয়েন্দাগিরি এবং কমান্ড-কন্ট্রোল বানচাল করা যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এখনো এমন অস্ত্র নেই বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের ‘আউটার স্পেস’ চুক্তির আওতায় পৃথিবীর কক্ষপথ বা মহাকাশে কোনো মারণাত্মক অস্ত্র মোতায়ন করা নিষিদ্ধ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্কের ক্রমাগত অবনতির কারণে একাধিক আন্তর্জাতিক সামরিক চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *