লক্ষ্য মাত্র ১৪৩ রান। ওভারপ্রতি সাড়ে ৭ রান। কাগজকলমে বিপিএলের শক্তিশালী দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে হারাতে দুর্দান্ত ঢাকার বেশি কিছু করতে হতো না। ঝুঁকিহীন ক্রিকেট না খেললেও চলবে। কিন্তু ঢাকার ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম সে পথে গেলেন না। ইনিংসের প্রথম ওভার থেকেই তিনি ব্যাট চালালেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যার স্ট্রাইক রেট ১০৯, সেই নাঈমের নামের পাশে আজ পাওয়ার প্লে শেষে ২৩ বলে ৪০ রান জ্বলজ্বল করছিল, স্ট্রাইক রেট ১৭০! তাঁর বিস্ফোরক ইনিংসে ৬ ওভার শেষে ঢাকার রান কোনো উইকেট না হারিয়ে হয়ে যায় ৫৬।
পাল্লাটা তখনই দুর্দান্ত ঢাকার দিকে হেলে পড়ে। কিন্তু ইনিংসের মাঝে ও শেষের দিকের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সৌজন্যে কুমিল্লা ম্যাচটাকে শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নিতে সক্ষম হয়। জয়ের ক্ষীণ সম্ভাবনাও জাগায় লিটনের দল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কুমিল্লাকে ৫ উইকেটে হারায় ঢাকা। বিপিএলও উদ্বোধনী ম্যাচেই জন্ম দেয় অঘটনের। ঢাকার হয়ে সর্বোচ্চ ৫২ রান আসে নাঈমের ব্যাট থেকে। কুমিল্লার হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তানভীর ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান। তবে এ ম্যাচটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ঢাকার পেসার শরীফুল ইসলামের হ্যাটট্রিকের জন্য।
ঢাকার ইনিংসের গল্পটা লিখতে গেলে নাঈমের নামটা সবার আগে আসবে।। আজ ইনিংসের প্রথম বলটাই বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছেন এই বাঁহাতি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার ম্যাথু ফোর্ডের করা ইনিংসের তৃতীয় বলটি লেট কাট করে বাউন্ডারিতে পাঠান নাঈম। পরের ওভারে তরুণ পেসার মুশফিক হাসানের বলে ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৯ রান যোগ করেন। রান রেট নাগালে চলে আসে সেই ওভারেই। এরপর ওভার প্রতি একটি বাউন্ডারির লক্ষ্যে ব্যাটিং করেছেন নাঈম। নাঈম দ্রুত রান তোলায় আরেক ওপেনার দানুস্কা গুনাতিলাকাকে ঝুঁকি নিতে হয়নি। দুজন মিলে উদ্বোধনী জুটিতে ১০১ রান যোগ করেন ১২.৪ ওভারে।
বাঁহাতি স্পিনার তানভীর আহমেদ এসে জুটি ভাঙেন। লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ম্যাথু ফোর্ডের হাতে ক্যাচ তোলেন নাঈম। ৪০ বলে ৩টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫২ রান করেন এই বাঁহাতি। গুনাতিলকাও ৪২ বলে ৪১ রান করে মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন। মোস্তাফিজুর রহমান এসে আউট করেন লাসিথ ক্রসপুল্লেকে (৫)। টিকতে পারেননি সাইফ হাসানও (৭)। দ্রুত দুই ব্যাটসম্যান আউট হলে কিছুটা চাপে পড়ে ঢাকা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য যখন দরকার ৪ রান, মোস্তাফিজের বলে দারুণ ক্যাচে ইফরান শুক্কুর আউট হন। উইকেট পতনে কুমিল্লার জয়ের ক্ষীণ আশা জাগে ঠিকই, কিন্তু চতুরাঙ্গা ডি সিলভা তা হতে দেননি। ক্রিজে এসে প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে ঢাকার ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন।
ঢাকার জয়ের মঞ্চটা গড়ে দিয়েছে তাদের বোলিং। বোলিংই শক্তি-দুর্দান্ত ঢাকার স্লোগান হতে পারে এটি। কম বাজেটের এই দলটায় আছেন তাসকিন আহমেদ ও শরীফুল ইসলাম। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সেরা দুই পেসার থাকলে আর কী লাগে! দরকার শুধু তাদের ৮ ওভার সঠিকভাবে ব্যবহার করা। ঢাকার অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন আজ তা করতে পেরেছেন। দুজনের ৮ ওভার থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ব্যাটসম্যানরা নিয়েছন মাত্র ৫৭ রান, উইকেট গেছে ৫ টি। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করে সব আলো নিজের করে নিয়েছেন শরীফুল। যা এবারের বিপিএলে প্রথম ও সব মিলিয়ে সপ্তম হ্যাটট্রিক।
এ সবই কুমিল্লার ইনিংসের শেষ দুই ওভারের ঘটনা। ইনিংসের শুরুতেও ছিল ঢাকার বোলিংয়ের দাপট। তাসকিন-শরীফুলের সঙ্গে দুই বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি ও চতুরাঙ্গা ডি সিলভার বোলিং হাত খুলতে দেয়নি কুমিল্লার ব্যাটসম্যানদের। অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার বিপিএল ম্যাচ খেলতে নামা লিটন দাস ১৬ বলে ১৩ রান করে আউট হয়েছেন নাঈমের হাতে ক্যাচ দিয়ে। এরপর তিনে নামা তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে ১০৭ রান যোগ করেন ইমরুল কায়েস। ইমরুলের ব্যাট থেকে আসে ৫৬ বলে ৬৬ রান। ৬টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে। দ্রুত রান তুলতে পারেননি তাওহিদও। তাঁর ৪৭ রান এসেছে ৪১ বলে,১টি চার ও ২টি ছক্কা মেরেছেন।
তবে দুজন মিলে কুমিল্লার বিগ হিটারদের জন্য ক্রিজে এসেই মেরে খেলার মঞ্চ গড়ে দিয়েছিলেন। খুশদিল শাহ ৫ বলে ২ ছক্কায় ১৩ রান করে সে কাজটা করছিলেনও। শরীফুলের করা ইনিংসের শেষ ওভারে ২টি ছক্কা মেরে কুমিল্লার রানটাকে ১৪০ এর ঘরে নিয়ে যান। কিন্তু এরপরই শরীফুল লেংথ বদলে ফেলেন। তাসকিনের পরামর্শে গতি কমিয়ে আনেন, পিছিয়ে আনেন লেংথ। তাতেই পরপর তিন বলে ৩ উইকেট। একে একে আউট খুশদিল, রোস্টন চেজ ও মাহিদুল ইসলাম। কুমিল্লার রানটা লাগাম ছাড়া হতে দেয়নি শরীফুলের শেষ তিনটি বল।