কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের চরবাড়িয়া এলাকার হাজী কোরবান আলীর দুই মেয়ে। থাকতেন ঢাকায়। এক মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। আর সাদিয়া আফরিন আলিশা অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলে । তাদের খালাতো বোন ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান নিমুসহ গতকাল গিয়েছিলেন বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে। তবে সেখান থেকে আর প্রাণ নিয়ে ফেরা হয়নি তাদের।
নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে রিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। তাই আগের দিন (বৃহস্পতিবার) শপিং করতে ও তাদের এক আন্টির সঙ্গে দেখা করতে যান। খেতে যান বেইলি রোডের বহুতল ভবনের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে।
নিহত দুই বোনের বাবা কোরবান আলী বলেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে মেয়েরা এলাকায় এসেছিল। কয়েক দিন বাড়িতে থেকে চলে গেছে। শুক্রবার রাতে আমিসহ মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। টিকিটও কেটেছিল। কিন্তু গত রাতেই মারা গেছে। নিমু তাদের খালাতো বোন। একই সঙ্গে গিয়ে আর ফেরেনি। আমার ঘর আনন্দে ভরে থাকতো। আজ আমার ঘর শূন্য।
কোরবান আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, যখন জীবিত মানুষ উদ্ধার শেষ হলো, তখন আমার শরীর কাঁপছিল। আমি ঘামাচ্ছিলাম। বুকের ভেতর কেমন যেন হয়েছিল। আমার চোখে পানি আর বুক ভারী হয়ে আসছিল। রাত যখন ১০টার কাছাকাছি, তখন আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হলো।
তিনি বলেন, যে মেয়েকে সন্ধ্যায় ভালোভাবে বিদায় দিয়েছি তার পোড়া লাশ দিয়েছে আমাকে। আমি আমার দুই স্বপ্নের লাশ নিয়ে বাড়ি এসেছি। বিকালে পুকুর পাশের কবরস্থানে রেখে আসবো আমার দুই স্বপ্ন।
সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমরা যারা ঢাকায় থাকি, সবসময় আতঙ্কে থাকি। কেউ নিরাপদ নই। একটা দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই নড়েচড়ে বসে। আবার ক’দিন পরে আগের মতো হয়ে যায়। তারা কেউ তেমন পুড়ে মারা যায়নি, শ্বাসকষ্টে মারা গেছে, তারা বের হতে পারেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু ডিশ লাইনের ক্যাবল, ইন্টারনেট ক্যাবল আর বৈদ্যুতিক ক্যাবলের জন্য তাদের গাড়িও ঠিক জায়গায় স্থাপন করে পানি দিতে পারেনি। ফলাফল হলো লাশের পর লাশ…।