বিমানবন্দরে গিয়ে টিকিটের ক্রেতা বুঝতে পারতেন, জাল টিকিট কিনে প্রতারিত হয়েছেন তিনি। তখন বাড়তি ঝামেলা এড়াতে বেশির ভাগই কোনো অভিযোগ করতেন না। এভাবে কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার মানুষকে বোকা বানিয়েছেন চক্রের সদস্যরা। এই চক্রের হোতা লিটন মিয়াসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেফতার বাকিরা হলেন মো. বেল্লাল হোসেন ও মো. রিয়াজ শেখ। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি কম্পিউটার ও চেকবইসহ ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়। গতকাল শুক্রবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, কুয়েত প্রবাসী লিটন মিয়া দেশে ফিরে ভিসা প্রসেসিং-সংক্রান্ত কাজ শুরু করেন। তারই ব্যবস্থাপনায় এক জন বিদেশে গিয়ে আর ফিরে আসেননি, লিটনের পাওনা টাকাও পরিশোধ করেননি। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে নিজেই নামেন প্রতারণায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিসকাউন্টে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে প্রতারণার টোপ ফেলেন। সাশ্রয়ী দামের টিকিট বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিতেন, সরবরাহ করতেন জাল টিকিট। অভিনব এ প্রতারণায় বিশেষ করে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে লিটনের মাসিক আয় প্রায় ৩ লাখ টাকা।
একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, কুয়েত প্রবাসী মজনু মিয়া গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তার স্বজন হুমায়ুন কবিরকে জানান, তিনি মে মাসে বাংলাদেশে ছুটিতে আসবেন। কুয়েত থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার টিকিটের মূল্য বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে টিকিট কিনতে বলেন। বাংলাদেশে হুমায়ুন কবিরের কোনো পরিচিত ট্রাভেলস না থাকায় অনলাইনে সান ফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের খোঁজ পান। যেখানে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে (কুয়েত-ঢাকা-কুয়েত) টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ফেসবুকে দেয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে টিকিট দিতে পারবে বলে জানায়। ফোনে যোগাযোগ করে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হুয়ায়ুন যাত্রাবাড়ী ধলপুর এলাকায় লিটন মিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। দেখা করার পর হুমায়ুন মজনু মিয়ার সঙ্গে কথা বলে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট এর ফটোকপি দেন। বাকি ৪৭ হাজার টাকা লিটনের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে পরিশোধ করেন। টাকা পাওয়ার পর চক্রটি মজনু মিয়ার হোয়াটসঅ্যাপে আলজাজিরা বিমানের টিকিটের কপি পাঠায়। পরবর্তী সময় যাচাই করে দেখা যায় টিকিটটি জাল। এরপর লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে লিটন হোয়াটসঅ্যাপে মজনু মিয়াকে ব্লক করে দেয়।
গ্রেফতার লিটনের বিষয়ে ডিবি জানান, চতুর্থ শ্রেণি পাশ লিটন মিয়া ২০১২ সালে কুয়েতে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিল। দেশে এসে লিটন ভিসার কাজ শুরু করেন। পরবর্তী একজন লিটনের টাকা আত্মসাত্ করে বিদেশ গেলে সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
লিটন প্রথমে ফেসবুকে সানফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি পেজ খুলে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে টিকিট বিক্রির কথা বলে পোস্ট করেন। চটকদার বিজ্ঞাপনে বিদেশে কর্মরত শ্রমজীবী লোকজন আকৃষ্ট হয়ে ফেসবুকে দেওয়া নম্বরের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে। তাদের মধ্য থেকে লিটন টার্গেট বাছাই করে ডিসকাউন্ট প্রাইজে টিকিট বিক্রির টোপ ফেলেন। লিটন কাস্টমারদের তার অফিস সিটি সেন্টারের লিফটের ১১ তে বলেন এবং কাস্টমারের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে বলেন। লিটনের অবর্তমানে কাস্টমারদের সঙ্গে রিয়াজ কথা বলে। এয়ার টিকিট ক্রেতাদের টাকা পাওয়ার পর তাদের হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করে দেয়। অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন প্যাকেজের অফার দেওয়া হচ্ছে।