ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা বাড়ানো উচিত, তিনজন যথেষ্ট নয়: সালেহউদ্দিন আহমেদ

ব্যাংক কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ ও তাঁদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও সম্মানী নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা করেছে, তা মন্দ নয়। উদ্যোগ হিসেবে এটি খুবই ভালো। নিয়োগের যোগ্যতা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, সেগুলো ঠিকই আছে। সম্মানী, ভাতা—সেগুলোই ঠিক আছে।

তবে আমার প্রশ্ন হলো, ২০ জন পরিচালকের মধ্যে ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালক কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারবেন, তা নিয়ে। আমার মতে, ২০ জনের মধ্যে ৪ বা ৫ জন অথবা এক-তৃতীয়াংশ স্বতন্ত্র পরিচালক থাকলে ভালো হতো। সে ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা রাখার বা বক্তব্য দেওয়ার পরিসর আরও বাড়ত।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই স্বতন্ত্র পরিচালকেরা যে ব্যাংকের মূল ধারার পরিচালক বা চেয়ারম্যানের আত্মীয়স্বজন নন, তা কীভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব। ব্যাংকের মালিকেরা তো চাইবেন নিজেদের মানুষকে নিয়োগ দিতে।

বাংলাদেশে এ ধরনের নীতিমালা অনেক আছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে। কারণ, পরিচালকেরা চাইবেন না পর্ষদে স্বাধীন ও পেশাদার স্বতন্ত্র পরিচালক থাকুক। তাঁরা হয়তো বলবেন, লোক পাওয়া যাচ্ছে না—এই অজুহাতে তাঁরা নিজেদের মানুষ বসিয়ে দিতে পারেন। সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে বলে আমি মনে করি। তাঁদের ভূমিকা কেবল নীতিমালা করে দেওয়ার মধ্যেই সীমিত থাকলে চলবে না। যেমন কারা স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারেন, তাঁদের একটি তালিকা করে দিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থাৎ ব্যাংকগুলোকে তারা এ ক্ষেত্রে পরামর্শ দিতে পারে। মোদ্দাকথা, নীতিমালা বাস্তবায়নে তাঁদের উদ্যোগী হতে হবে।

এরপর চলে আসে স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা। হয়তো এমন হতে পারে যে ২০ জন পরিচালকের মধ্যে তাঁরা ৩ জন একটি ঋণপ্রস্তাবের বিরুদ্ধে, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পর্ষদ সেই প্রস্তাব পাস করিয়ে লিখে দিল, সর্বসম্মতিক্রমে এই ঋণপ্রস্তাব পাস হয়েছে। সেটা যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে বিষয়টির উল্লেখ থাকতে হবে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালকেরা কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলে তা–ও যেন কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ শুধু বেতন-ভাতা দিলেই হবে না, আমানতকারীদের পক্ষ থেকে তাঁদের ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *