অজানা ভাইরাসের আক্রমণে ২ মেয়ের মৃত্যুর পর মা–বাবাও হাসপাতালে

অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই মেয়ের মৃত্যুর পর মা–বাবাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়েরা গৃহকর্মীর এনে দেওয়া বরই খেয়েছিল। গাছতলা থেকে কুড়িয়ে বরই এনে দিয়েছিলেন গৃহকর্মী।

মারা যাওয়া দুই শিশুর নাম মুনতাহা মারিশা (২) ও মুফতাউল মাসিয়া (৫)। দুই শিশুর বাবা মঞ্জুর হোসেন (৩৫) ও মা পলি খাতুন (৩০)। তাঁদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে।
মনজুর রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক। তাঁরা ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই ছিলেন। ছোট মেয়ের মৃত্যুর পর গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, দুই মেয়ে বরই খেয়েছিল। তিনি বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বরইগুলো ধুয়ে দেওয়া হয়েছিল কি না। তাদের বাবা বলেছেন, ‘গৃহকর্মী গাছতলা থেকে কুড়িয়ে এনে দিয়েছিল, ধোয়া হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোনো ভাইরাস হতে পারে। তাই নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে
দুই মেয়েকে হারিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আইসোলেশনে থাকা মা–বাবা যেন পাথর হয়ে গেছেন। শনিবার রাত আটটার দিকে খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলে প্রথমে পলি খাতুন এ ব্যাপারে কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘এসব লিখে আর কী হবে।’ তাঁর পাশের শয্যায় চিকিৎসাধীন মনজুর বললেন, ‘লিখুক, মানুষ সচেতন হবে।’ এরপর মা বাধাহীনভাবে কথা বলতে থাকলেন।

গত বুধবার সকালে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। বিকেলে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মাইক্রোবাসে মারা যায়। মৃত্যুর পর মা–বাবা লক্ষ করেন, মারিশার গায়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ উঠেছে। ওই দিন রাতেই তাকে দাফন করা হয়। একদিন পর গতকাল শুক্রবার বড় মেয়ে মাসিয়ার একই লক্ষণসহ জ্বর আসে। সে–ও ছোট বোনের মতো বমি করছিল আর ঘন ঘন পানি খাচ্ছিল। লক্ষণ বুঝতে পেরে মা–বাবা দেরি করেননি। রাজশাহীর সিএমএইচ এ ভর্তি করেন।গতকাল রাত ৯টার দিকে মারিশার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আজ বিকেল পাঁচটার দিকে সে মারা যায়। এরপর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দুই শিশুর মা–বাবাকে আর বাড়িতে যেতে দেননি। তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্যের মাধ্যমে লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে তাঁরা দুজনেই হাসপাতালে আছেন।

পলি খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ে দুটো পরির মতো ছিল। বড় মেয়েটা হওয়ার পর তার মাথায় ক্লিপ ব্যবহার করতে হতো। এত সুন্দর চুল ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *