রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতক শ্রেণীতে প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা আজ মঙ্গলবার (৫ মার্চ) থেকে শুরু হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত চার শিফটে ‘সি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বুধবার ‘এ’ ইউনিট (মানবিক) এবং বৃহস্পতিবার ‘বি’ ইউনিট (বাণিজ্য) ও ‘সি’ ইউনিটের (অবিজ্ঞান) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিনে চার শিফটে সি ইউনিটের বিজ্ঞান গ্রুপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত গ্রুপ-১ এর রোল ৩১০০০১ থেকে ৩২৮৬৪৪; বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত গ্রুপ-২ এর রোল ৩৩০০০১ থেকে ৩৪৮৬৪৪; বেলা ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত গ্রুপ-৩ এর রোল ৩৫০০০১ থেকে ৩৬৮৬৪৪; এবং বিকেল ৩:৩০ থেকে ৪:৩০ মিনিট পর্যন্ত গ্রুপ-৪ এর রোল ৩৭০০০১ থেকে ৩৮৮৬৪৫ এর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগে ভবনসমূহের গেট এবং ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষের দরজা খুলে দেওয়া হবে।
এবারে এক ঘণ্টাব্যাপী ভর্তি-পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষা চলাকালে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কক্ষের বাইরে যেতে পারবে না। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন ও ক্যালকুলেটরসহ মেমোরিযুক্ত অন্য কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে রাখা যাবে না।
ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতা প্রদানের জন্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সহজগম্য স্থানে ১২টি হেল্পডেস্ক এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিভাবকদের অবস্থানের জন্য প্রতিটিতে ২০০ আসনবিশিষ্ট ১১টি টেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বসার জন্য নির্দিষ্ট টেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে খাবার পানি ও চিকিৎসা সুবিধারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন আবাসিক হলে ও বিশ^বিদ্যালয় জিমনেসিয়ামে সীমিত আকারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনোরূপ হয়রানি ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড এবং দোকানগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া খাবারের মান বজায় রাখার স্বার্থে ভোক্তা অধিদপ্তরের ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত থাকবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো রকমের গুজবের (সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হলেও) বিষয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পরীক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি নিজ দায়িত্বে রাখতে হবে। এ ব্যাপারে কোন সহায়তাকারী বলে প্রচারিত ব্যক্তি/সংগঠনের খপ্পর পরিহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কর্তৃপক্ষ বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ক্যাম্পাসের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ, এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে।
ভর্তিচ্ছুদের মানতে হবে যেসব নির্দেশনা:
অনলাইনে প্রদত্ত দুই পৃষ্ঠার (প্রথম পৃষ্ঠা পরীক্ষার্থীর এবং দ্বিতীয় পৃষ্ঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের কপি হিসেবে নির্ধারিত) প্রবেশপত্র অবশ্যই ‘এ ফোর’ সাইজের দুটি পৃথক অফসেট কাগজে কালার প্রিন্ট করতে হবে। পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই তাঁর প্রবেশপত্রে উল্লেখিত নির্দিষ্ট কক্ষের নির্ধারিত আসনে পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে প্রার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার ১৫ মিনিট পরে কোন প্রার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
উত্তরপত্রে সব ধরনের লেখার কাজে কালো কালির বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করতে হবে। পেনসিলের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রার্থীকে উল্লেখিত দুই পৃষ্ঠার প্রবেশপত্র এবং উচ্চমাধ্যমিকের মূল রেজিস্ট্রেশন কার্ড অবশ্যই সঙ্গে আনতে হবে। পরীক্ষার হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রবেশপত্রদ্বয়ের প্রতিটিতে এমনভাবে স্বাক্ষর করবেন, যেন অর্ধেক অংশ ছবির ওপর থাকে। স্বাক্ষরিত প্রবেশপত্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের কপিটি দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক সংগ্রহ করবেন। পরীক্ষার্থীর কপি পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।
ক্যালকুলেটর, মেমোরিযুক্ত ঘড়ি, মোবাইল ফোন, ব্লু-টুথ বা টেলিযোগাযোগ করা যায়—এরূপ কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রসহ পরীক্ষার হলে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার হলে কোনো পরীক্ষার্থীর কাছে এরূপ কিছু পাওয়া গেলে তাঁর ভর্তির আবেদন বাতিল করা হবে। পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর মুখমণ্ডল ও দুই কান খোলা থাকতে হবে। বিভিন্ন স্তরে সংগৃহীত আবেদনকারীর ছবি বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনে ব্যবহার করা হবে। ভেরিফিকেশনে কোনো ধরনের অসংগতি পরিলক্ষিত হলে ওই আবেদনকারীর আবেদন বাতিল করা হবে। পরীক্ষা চলাকালে কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কক্ষের বাইরে যেতে পারবেনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, এবছরও ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ এই তিনটি ইউনিটের মাধ্যমে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। ‘এ’ ইউনিটে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ২৭টি বিভাগসহ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অন্তর্ভুক্ত আছে। ‘বি’ ইউনিটে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ৬টি বিভাগ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট এবং ‘সি’ ইউনিটে বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২৬টি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত আছে।
এ বছর বিশেষ কোটাসহ মোট আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৪৩৮টি এবং কোটা বাদে আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৯০৪টি। অর্থাৎ, এবার কোটায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন ৫৩৪ জন শিক্ষার্থী। মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬শো৮০ টি চূড়ান্ত আবেদন জমা হয়েছে। ‘এ’ ইউনিটে ৭৪ হাজার ৭৮৫ টি ও ‘বি’ ইউনিটে ৩৪ হাজার ৫৪১ টি এবং ‘সি’ ইউনিটে ৭৬ হাজার ৩৫৪টি চূড়ান্ত আবেদন সম্পন্ন হয়েছে। একক আবেদনকারীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৭৭। এরমধ্যে পুরুষ আবেদন-কারীর সংখ্যা ৯০ হাজার ৪৫৬ এবং নারী আবেদন-কারীর সংখ্যা ৬৪ হাজার ৫২১। তবে কোটা বাদে আবেদনকারীর সংখ্যা ‘এ’ ইউনিটে ৬৯ হাজার ৫২৭ ও ‘বি’ ইউনিটে ৩২ হাজার ৬১৪ এবং ‘সি’ ইউনিটে ৭০ হাজার ৯৭৬।