মোট আলু বীজের সাত ভাগের এক ভাগ বিএডিসিসহ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পাওয়া যায়। বাকি ছয়ভাগ খাবার আলুকেই বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাজারে আলুর দাম বেশি থাকায় কিছু ব্যবসায়ী আলু বীজে দাম সিন্ডিকেট করে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। ফলে বীজ আলু নিয়ে কৃষকদের মাঝে হাহাকার চলছে। বেশি দাম দিয়ে অনেকে বীজ আলু সংগ্রহ করছেন। কৃৃষি বিভাগ বলছে গত বছরের চেয়ে এবার বেশি পরিমাণ জমিতে আলু আবাদ হতে পারে। তাই বীজ নিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকটের চেষ্টা চলছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় আলুর আবাদ হয়েছিল এক লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে। এবার কৃষি অফিস লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এক লাখ ১ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে। তবে কৃষি বিভাগ মনে করছে বাজারে আলুর ভাল দাম থাকায় এবার আলুর আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে। গত মৌসুমে আলুর দাম ভাল পাওয়ায় এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আলু বপনের মৌসুম শুরুর আগেই প্রতিকেজি বীজ আলুর দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
আলুর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পরে এবার বীজ সংকটের আশঙ্কা করছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসি মোট বীজের ৫/৬ শতাংশ সরবরাহ করতে পারে। বাকি আলু বীজ স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করেন কৃষকরা। হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীদের ওপর আলু বিক্রির চাপ বাড়ায় অনেকে ভয়ে বীজ আলুও বিক্রি করে ফেলছেন। আবার কেউ কেউ বেশি লাভের আশায় খাবারের আলুকে বীজ হিসেবে বিক্রি করছেন। ফলে বীজ আলু নিয়ে গড়ে উঠছে সিন্ডিকেট। মৌসুমের শুরুতেই প্রতিকেজি বীজ আলুর দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। পুরোপুরি মৌসুম শুরু হলে দাম কৃষকদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে এমনটা শঙ্কা করা হচ্ছে।
হিমাগার মালিক সমিতি, স্থানীয় ব্যবসায়ী, কৃষক ও বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, মোট আবাদের ৩০ শতাংশ আলু বীজের প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে রংপুর অঞ্চলে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টনের মত বীজের প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে বিএডিসি সরবরাহ করতে পারে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন। বড়-বড় কৃষক রোপনের বীজ আলু নিজেদের সংগ্রহে রাখলেও ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বীজ আলু ব্যবসায়ী পর্যায়ে সংগ্রহ করতে হয় কৃষকদের।
মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলুর দাম বেশি থাকায় অনেকে লাভের আশায় বীজ আলুও বিক্রি করে ফেলছেন। আমন ধান কাটামাড়াই শেষে পুরোদমে আলু রোপনের কাজ শুরু হবে এই অঞ্চলে। এসময় বীজ নিয়েও আলুর মত কেলেঙ্কারি শুরু হতে পারে এমনটা মনে করছেন সাধারণ কৃষক।
কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, আলুর নিয়ন্ত্রণ মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে চলে যাওয়ায় কৃষক পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। প্রতি মৌসুমে ৬০/৭০ টাকা কেজি দরে বীজ আলু ক্রয় করলেও এবার বাজারে আলু বীজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা করে। প্রতি বিঘা জমিতে আলু বীজ লাগে ২১৪ কেজি। প্রতি কেজিতে গড়ে ২৯ টাকা বেশি হওয়ায় এবার শুধু এক বিঘাতে বীজ বাবদ চাষিদের বাড়তি গুণতে হবে চার হাজার টাকার বেশি। বিএডিসি বীজ আলু গত বছর ছিল ৫৫ টাকা। এবার তা বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করা হয়েছে। অপরদিকে বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির বীজ আলু বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ৭৫ টাকা ১১৫ টাকা পর্যন্ত। যা গত বছরের চেয়ে বেশি। বীজের দাম বাড়ায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষে কৃষকদের বাড়তি গুনতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আলুর দাম বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী অভিযানের ভয়ে বীজ আলুও আগাম বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বেশি দাম পাওয়ার আশায় বীজ আলুও মজুদ করে রেখেছেন।
পীরগঞ্জ উপজেলার দুরামিঠিপুর গ্রামের আলু চাষি সাইফুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন জানান, ব্র্যাকের প্রতি কেজি স্টীক এবং পাকড়ী বীজ আলু ১৩০ টাকা এবং জাম (ইন্দু কানি) ৭০ টাকা দরে কিনে জমিতে লাগিয়েছেন। যা গত বছরের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, অনেকে খাবার আলুকে বীজ হিসেবে বিক্রি করছেন। বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় অনেকের আলু আবাদের আকাঙ্খা বেড়ে গেছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আলু আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব কারণে বীজ আলুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
রংপুর বিএডিস (বীজ বিপণন) উপ-পরিচালক মোঃ মাসুদ সুলতান বলেন, বিএডিস রংপুর অঞ্চলে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত বীজ আলু সরবরাহ করতে পারে। বাকি বীজ কৃষকরা নিজ উদ্যোগে গ্রহণ করেন।