রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন মাজার রোড এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে এখন আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং ‘অতুল বাহিনী’। অভিযোগ রয়েছে, এই গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চাঁদা দাবি করে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাদের ওপর চালানো হয় হামলা। এসব ঘটনায় কেউ মামলা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।
সম্প্রতি আয়েশা সুপার মার্কেটের দোকানে চাঁদা দাবি করাকে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়েকটি দোকানে হামলা চালায় তারা।
এদিকে চাঁদাবাজি ও হামলার ঘটনায় দারুস সালাম থানায় ভুক্তভোগীরা মামলা করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দিয়ে গড়িমসি করে বলে জানা যায়। অবশেষে নিরুপায় হয়ে গত বুধবার হামলা ও চাঁদাবাজির বিষয়ে এক ভুক্তভোগী ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর অভিযোগ দেন ।
পারভেজ নামে ভুক্তভোগী এক মুদী দোকানি জানান , ‘আমার কাছ থেকে অতুল বাহিনীর সদ্যরা অতুলের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রসহ দোকানে এসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
চাঁদা দিতে রাজি না হলে দোকানে ভাঙচুর করে, আমাকে মারধর করে হুমকি দিয়ে যায়। এ অবস্থায় থানায় গেলে কোনো সহযোগিতা পাইনি। এই অবস্থায় আমরা দোকানদারগণ ও সাধারণ এলাকাবাসী খুবই আতঙ্কে সময় পার করছি। তাই ডিএমপি কশিশনার বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযোগে পারভেজ উল্লেখ করেন, ‘গত ৮ জানুয়ারি রাত ১১টায় মিরপুর মাজার রোডে আয়েশা সুপার মার্কেটের সামনে কিছুসংখ্যক অতুল বাহিনীল সদস্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে দোকানপাটে হামলা চালায়। স্থানীয় এলাকাবাসী ও দোকানদাররা বিষয়টি নিয়ে খুবই আতঙ্কিত। হামলাকারীরা একজনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। আবার কেউ যেন মামলা না করে সে ব্যাপারে নানারকম ভয়ভীতি দেখায়। ঘটনাস্থলে হামলাকারীরা আমার কাছে চাঁদা দাবি করে ও আমার দোকান ভাঙচুর করে ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে।
এর আগেও এ বাহিনীর বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় হত্যা মামলাসহ ২০টির অধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু তারা জামিনে বের হয়ে এসে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। দারুস সালাম থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে চায় না।’
এই প্রতিবেদকের হাতে আসা ওই দিনের ঘটনার এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ৫-৬ জন কিশোর ‘রামদা’ হাতে একসঙ্গে হাঁটছে। তাদের সঙ্গে ২-৩টি মোটরসাইকেল রয়েছে। তারা বিভিন্ন দোকানে যাচ্ছে ও রামদা দিয়ে ইশারা করছে। কেউ কিছু বললে ‘রামদা’ দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। এভাবে প্রায় ১০-১২টি দোকানের সামনে গিয়ে চাঁদা দাবি করে এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এদের মধ্যে শফিকুর রহমান অতুল (২৬) নেতৃত্ব দিচ্ছে।
একাধিক ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, অতুল বাহিনীর বিষয়ে দারুস সালাম থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। এই বাহিনীটির সদস্যরা থানার আশপাশে প্রায়ই অবস্থান করে নজরদারি করে তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দেয় কিনা। এভাবে মামলা করতে গেলে বিভিন্ন সূত্রে অতুল বাহিনী খবর পেয়ে যায়। পরে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যদের ভয় দেখায়। এভাবে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠে অতুল বাহিনী।
এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার ওসি নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এই এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত রয়েছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে আমরা নিয়মিত টহলিং এবং অভিযান চালাচ্ছি। নানা সময় তাদের ধরে অভিভাবকদের ডেকে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে কোন গ্রুপ চাঁদাবাজি ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করছে এমন কোনো তথ্য যদি পাই, অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
থানা মামলা না নিলে কমিশনার বরাবর অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, অপরাধ করলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে থানায় আসতে হবে। তাকে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন অবশ্যই মামলা নেওয়া হবে।