সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি পোস্ট করে রীতিমতো চমকেই দিয়েছেন শোয়েব মালিক। পাকিস্তানি অভিনেত্রী সানা জাভেদকে বিয়ে করার খবর শোয়েব নিজেই জানিয়েছেন।
বিয়ের সাজে সানার সঙ্গে দাঁড়িয়ে তোলা ছবিটি পোস্ট করে পবিত্র কোরআন শরিফের আয়াত উদ্ধৃত করেছেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার, ‘আলহামদুলিল্লাহ, নিশ্চয়ই তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে।’ অর্থাৎ সানার সঙ্গে জীবনের নতুন জোড়া বেঁধেছেন ৪১ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। কিন্তু এটা শোয়েবের জীবনে প্রথম ‘জোড়া’ নয়; তাঁর বিবাহিত জীবনে সানিয়া মির্জা আসার আগে আয়েশা সিদ্দিকী নামেও এক নারী এসেছিলেন।
ভারতের টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাকে ২০১০ সালে বিয়ে করেন শোয়েব। তাঁদের সংসারে আছে পাঁচ বছর বয়সী সন্তান ইজহান। রাজনৈতিকভাবে বৈরী দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত ডিঙিয়ে খেলার ভুবনের দুই তারকার সেই প্রণয় এবং তার সফল পরিণতি নিয়ে তখন এন্তার খবর প্রকাশ করেছিল সংবাদমাধ্যম। বেশির ভাগই বিষয়টিকে খুব ইতিবাচক চোখে দেখেছিলেন। খেলার ভুবনের দুই তারকার ঘর বাঁধায় যদি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতার আঁচ কিছুটা কমে—এমন আশা করেছিলেন অনেকেই। আর আশার বেশ কিছুটা পূরণও হয়েছিল।
খেলা–সংশ্লিষ্ট বা যেকোনো কারণে শোয়েব ভারতে গেলে তাঁকে ‘জামাই’ সম্বোধন করেছেন অনেকেই। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভারতের পাকিস্তানি ‘জামাই’ হিসেবে শোয়েবকে সম্বোধন করতেন সাধারণ ক্রিকেটমোদীরা। আর দুজনকে একসঙ্গে ডাকা হতো ‘শোয়েনিয়া’। কিন্তু সানিয়ার সঙ্গে জীবনের উইকেটে শোয়েবের জুটিটা টিকল না—এ কথা বলতে হচ্ছে শোয়েব আবারও বিয়ে করায়। দুজনের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে কি না, তা এখনো জানা যায়নি। তবে সানিয়া-শোয়েবের সংসার থেকে মন পোড়ার গন্ধ আসছিল বেশ আগেই।
বেশি দিন আগের কথা না, গত বুধবার নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে একটি পোস্ট করেছিলেন সানিয়া। সেই পোস্ট দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন কিছু তো গড়বড় আছেই কিংবা গড়বড় হচ্ছে, ‘বিয়ে যেমন কঠিন, তেমনি বিচ্ছেদও কঠিন। স্থূলতা যেমন কঠিন, তেমনি ফিট থাকাও কঠিন। কোন কঠিনকে বেছে নেবেন, সেটি ঠিক করুন। ঋণে পড়া যেমন কঠিন, তেমনি আর্থিকভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকাও কঠিন। কোন কঠিনকে বেছে নেবেন, সেটি ঠিক করুন। যোগাযোগ রাখাও কঠিন, তেমনি না রাখাও…জীবন কখনো সহজ হয় না। এটা সব সময়ই কঠিন। কিন্তু আমরা কোন কঠিনকে চাই, সেটা বেছে নিতে পারি। বুঝেশুনে বাছাই করুন।’ ৮ জানুয়ারি ইনস্টাগ্রামে সানিয়ার করা আরেকটি পোস্ট থেকেও অনেকে আন্দাজ করেছেন, সংসারজীবনে ভালো নেই দুই তারকা, ‘যখন কোনো কিছু হৃদয়ের শান্তি বিঘ্নিত করবে, সেটা ভুলে যাও।’
ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, শোয়েবের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে তোলা ছবিগুলোও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে ফেলেছেন ৩৭ বছর বয়সী সানিয়া। গত বছরের নভেম্বর থেকে তাঁদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন চাউর হয়েছিল। কিন্তু দুজনে মিলে ‘দ্য মির্জা মালিক শো’ অনুষ্ঠান করার পর সেই গুঞ্জন কিছুটা থেমে গিয়েছিল। সেটা অবশ্য বেশি দিনের জন্য না।
গত বছর শোয়েব নিজের ইনস্টাগ্রাম বায়ো থেকে ‘সুপারওম্যান সানিয়ার স্বামী’ লেখাটা মুছে ফেলার পর গুঞ্জনটা আবারও ডালপালা বিস্তার করে। আর তার কারণ হিসেবে সংবাদমাধ্যম সামনে তুলে আনে পাকিস্তানের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী আয়েশা ওমরকে। আয়েশার সঙ্গে শোয়েবের প্রেমের খবরও প্রকাশিত হয়েছিল তখন। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমই এর আগে জানিয়েছিল, শোয়েব ও সানিয়া আলাদা বসবাস করছেন। শুধু সন্তানকে লালন-পালনের কাজটা করছেন একসঙ্গে।
তবে দুজন এ বিষয়ে কখনো টুঁ শব্দটি করেননি। সানিয়া প্রায়ই ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট দেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাঁর একটি পোস্ট এমন, ‘ভাঙা হৃদয় কী করবে? আল্লাহকে খুঁজবে।’ গত শুক্রবার এমন আরেকটি পোস্ট করেন, ‘সবচেয়ে কঠিন দিনগুলো পার করার মুহূর্ত।’ এই ক্যাপশনে সানিয়া একটি ছবিও জুড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর ছেলে ইজহানের মায়ের নাকে চুমু খাওয়ার ছবি।
আয়েশা ওমর পাকিস্তানি অভিনেত্রী, মডেল ও ইউটিউবার। পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীদেরও একজন। ২০১৫ সালে সিনেমায় নামার তিন বছর আগে ২০১২ সালে গানের অ্যালবামও বের করেছিলেন। সেটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছিল। ২০২১ সালে আয়েশার সঙ্গে একটি সাহসী ফটোশুটে অংশ নিয়েছিলেন শোয়েব। ২০২২ সালে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর শোয়েব-আয়েশাকে নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের সাবেক পেসার শোয়েব আখতারের একটি ‘চ্যাট শো’তে উপস্থিত হয়ে আয়েশা সেই গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি কখনোই বিবাহিত কিংবা কারও সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে, এমন কারও প্রতি আকর্ষণ বোধ করব না…সবাই আমাকে জানে।’ শোয়েবও জিও নিউজের এক অনুষ্ঠানে ব্যাপারটি গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দেন।
আয়েশা সিদ্দিকীকে কি বিয়ে করেছিলেন শোয়েব মালিক । ২০১০ সালে শোয়েব মালিক সানিয়া মির্জাকে বিয়ে করার কিছুদিন আগে বিতর্কটা চাউর হয়। ভারতের হায়দরাবাদ থেকে আয়েশা সিদ্দিকী নামের এক নারী দাবি করেন, ২০০২ সাল থেকেই তিনি শোয়েব মালিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। এ নিয়ে তখন তুমুল বিতর্ক চলেছে। পাকিস্তানি অলরাউন্ডার আয়েশার দাবি নাকচ করেছিলেন। এরপর আয়েশা প্রতারণার দায়ে শোয়েবের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পেশায় শিক্ষক এই নারীর আরেক নাম মাহা সিদ্দিকী। প্রমাণ হিসেবে তিনি শোয়েবের সঙ্গে বিয়ের ভিডিও দেখিয়েছিলেন। এরপর শোয়েব সানিয়াকে বিয়ে করার কিছুদিন আগে ২০১০ সালের এপ্রিলে আয়েশাকে ডিভোর্স দেন, মানে বিবাহবিচ্ছেদ করেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া অন্যান্য সূত্র থেকে জানিয়েছে, এই বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর করতে অন্তত ১০ জন ব্যক্তি মধ্যস্থতা করেছিলেন। আর এই বিচ্ছেদ থেকে ভরণপোষণ বাবদ ১৫ কোটি রুপি পেয়েছিলেন আয়েশা সিদ্দিকী।
সানা জাভেদের পরিচয়
৩০ বছর বয়সী পাকিস্তানি অভিনেত্রী। উর্দু ভাষার টিভি চ্যানেলে তাঁকে দেখা যায়। ২০১২ সালে পাকিস্তানের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘শের-ই-জাত’ দিয়ে তাঁর পর্দায় অভিষেক। এরপর বেশ কিছু ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। ২০১৭ সালে প্রচারিত রোমান্টিক ড্রামা ‘খানি’তে অভিনয় করে লাক্স স্টাইল অ্যাওয়ার্ডসের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন সানা জাভেদ। এটি তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে। শোয়েবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে ২০২০ সালে পাকিস্তানের গায়ক ও গীতিকার উমাইর জসওয়ালকে বিয়ে করেছিলেন সানা। সংবাদমাধ্যম সিয়াসত ডেইলি জানিয়েছিল, বিয়ের কিছুদিন পরই দুজনে আলাদা বসবাস শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তাঁরা একে অপরের ছবিও মুছে ফেলেন।
বিপিএল খেলতে শোয়েব মালিক এখন বাংলাদেশে। তাঁর আবার বিয়ে করার খবর নিয়ে যখন তোলপাড়, শোয়েব মালিক তখন মাঠে। ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলছিলেন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। শোয়েব মালিকের তৃতীয় বিয়ে নিয়ে সানিয়ার কাছ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।