ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত বাড়ালেও সদ্যবিদায়ী ২০২৩ সালের শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণ করতে পারেনি। নতুন বছরে এসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে আমদানি দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ আরও কমে গেছে। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৮ কোটি ডলারে নেমেছে। তবে নিট রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের আকুর বিল বাবদ ১২৭ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন তথা আকু হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্ত–আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়। তবে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
তবে আকুর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ভারত পরিশোধ করা অর্থের তুলনায় অন্য দেশগুলো থেকে বেশি পরিমাণে ডলার আয় করে। বেশির ভাগ দেশকে আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয়। ব্যাংকগুলো এই আমদানির খরচ নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়, যাতে রিজার্ভ বাড়ে। জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মোট রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার, আর প্রকৃত রিজার্ভ ছিল প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার।
তবে আইএমএফের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ডিসেম্বরে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। ডলার-সংকটের মধ্যে আর্থিক হিসাব ও চলতি হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ছয় মাস পর সংস্থাটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। এর তিন দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও গত ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
ঋণ অনুমোদনের সময় আর্থিক খাতে নানা সংস্কারের পাশাপাশি চাহিদামতো নিট রিজার্ভ বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দেয় আইএমএফ।