শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানি ক্রাউন সিমেন্টের ষষ্ঠ ইউনিটে ৫ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে। সে সুবাদে এটি সিমেন্ট খাতে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন–সক্ষমতার কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
নতুন ইউনিট উৎপাদনে যুক্ত হওয়ায় চলতি বছর কোম্পানিটি ৬০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করতে পারবে বলে আশা করছে। আর সেটি হলে বছর শেষে ক্রাউন সিমেন্টের বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। কোম্পানি সূত্রে এমন আশাবাদের কথা শোনা গেছে।
ক্রাউন সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ গতকাল সোমবার জানায়, তাদের ষষ্ঠ ইউনিটের দৈনিক সিমেন্ট উৎপাদনক্ষমতা ৮ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন। আগের পাঁচটি ইউনিটের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ১১ হাজার মেট্রিক টন। ছয় ইউনিটে এখন দৈনিক সিমেন্ট উৎপাদনের ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াল ১৯ হাজার টনের বেশি।
মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে ক্রাউন সিমেন্টের কারখানায় নতুন ইউনিটটি স্থাপন করা হয়েছে। ভিআরএম প্রযুক্তির নতুন এ ইউনিট স্থাপনে এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ইউনিট চালু হলেও এখনো পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়নি। বর্তমানে বাজারে কিছুটা চাহিদা কম থাকায় নতুন ইউনিটের সক্ষমতার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ানো হবে। নতুন এ ইউনিট চালু হওয়ায় কোম্পানিটির ব্যবসা এক বছরে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা বাড়বে।
২০২২–২৩ অর্থবছরে ক্রাউন সিমেন্ট ২ হাজার ৪১৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, যা চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছর শেষে এই ব্যবসা বেড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে আশা করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠ ইউনিটটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২০ সালে। কিন্তু করোনার কারণে ওই বছরই এটির নির্মাণকাজ পিছিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ২০২১ সালে ইউনিটটির কাজ শুরুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ। নির্মাণকাজ শুরুর ১৭ মাসের মাথায় এটি উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে।
সিমেন্টশিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে উৎপাদন–সক্ষমতার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে শাহ সিমেন্ট। এটির দৈনিক উৎপাদন–সক্ষমতা ২৯ হাজার টনের বেশি। দ্বিতীয় স্থানে আছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্রিমিয়ার সিমেন্ট। কোম্পানিটির দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ২৪ হাজার মেট্রিক টন। আর ১৯ হাজার মেট্রিক টনের বেশি দৈনিক উৎপাদন–সক্ষমতা নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ক্রাউন সিমেন্ট।
ক্রাউন সিমেন্টের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরে ২ হাজার ৪১৮ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে কোম্পানিটির কর–পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৬১ কোটি টাকা। সব ধরনের খরচ বাদ দেওয়ার পর তাদের আড়াই শতাংশের বেশি মুনাফা হয়েছে। মুনাফার এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছরে ব্যবসা ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। তাতে কোম্পানিটির মুনাফা ৭৫ কোটি টাকার বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।