পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ, যাঁরা কর্তাব্যক্তি, যাঁরা পরিকল্পনার দায়িত্বে আছেন, তাঁরা পেশাদারি মনোভাব নিয়ে কাজটি করেন না। তাঁদের আসলে সেভাবে জবাবদিহিও করতে হয় না। আমি বলব, কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করে শুধু সবার সহযোগিতার দরকার—এমন কথা বলে বেড়ান। এভাবে দায় এড়ানোর কৌশল নেন তাঁরা।
পরিবহন খাতে সুশাসনের অভাব সরকারের সব সুন্দর অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। এই খাতে অর্জনের চেয়ে বিশৃঙ্খলা বেশি। সঠিক পরিকল্পনা করা না গেলে, সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
এক অর্থে পুরো পরিবহন খাতেই বিশৃঙ্খলা চলছে। সড়ক সুশৃঙ্খল করতে হলে আগে পরিকল্পনায় পারদর্শী হতে হয়। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হয়। পরিবহন খাতের বিভিন্ন জায়গায় যেসব কর্তাব্যক্তি রয়েছেন, তাঁদের প্রকৌশল ও কারিগরি জ্ঞানের যেমন অভাব আছে, তেমনি তাঁরা কতটা নিষ্ঠা নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
গাড়ির চালক তৈরি, ফিটনেস সনদ, রেজিস্ট্রেশন, বাসের রুট পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রেও সঠিক তদারকি নেই। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এই খাতের কর্তাব্যক্তিরা দিনের পর দিন ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও সেটি মানতে চান না তাঁরা। এসবের ফলাফল দাঁড়িয়েছে, পরিবহন খাতে দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহি বলে কার্যত কিছু থাকছে না। যদি দায়বদ্ধতা থাকত, তাহলে সড়কে দিনের পর দিন এত দুর্ঘটনা, এত মৃত্যু হতো না।
পৃথিবীর কোথাও মানুষ জন্মগতভাবে আইন মানেন না। আইন মানার পরিবেশ তৈরি করতে হয়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। রাজধানীর হাতিরঝিলে বাসচালকেরা পাল্টাপাল্টি করেন না। চালক যেখানে–সেখানে বাস থামান না, পথে যাত্রী তোলেন না। এটি ঢাকা শহরের অন্য কোথাও কেন ঘটে না?
পরিবহন খাতকে সুশৃঙ্খল করতে, সড়কে মৃত্যু কমিয়ে আনতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের দৃঢ়প্রত্যয়। যদি স্মার্ট উন্নয়ন করতে হয়, তাহলে পরিবহন খাতকে সুশৃঙ্খল করার কাজটি অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারি মনোভাব নিয়ে করতে হবে। গড়পড়তা জ্ঞানের লোকজনের ধ্যানধারণা দিয়ে এত দিন পরিবহন খাত চলছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে কার্যকর পরিকল্পনা নেওয়া গেলে পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা কমে আসবে। এর ফলে সড়কেও মৃত্যু কমবে। তা না হলে সবই আগের মতো রয়ে যাবে।