ফিন অ্যালেন বনাম পাকিস্তান—চলতি পাকিস্তান–নিউজিল্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজের নাম বোধ হয় এমনটাও রাখা যায়। আর এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়টাও আসছে অ্যালেনের। ডানেডিনে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে ৪৫ রানে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড। বাবর আজমের টানা তৃতীয় ফিফটির পরও ২২৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান তুলতে পেরেছে ১৭৯ রান।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে অ্যালেন ইনিংসটা বড় করত পারেননি। তবে শুরুর দিকে তাঁর ওই ১৫ বলে ৩৪ রানের ইনিংস পাকিস্তানি বোলারদের মনোবল ভেঙে দিয়েছিল। পরের ম্যাচে করেছিলেন ৪১ বলে ৭৪। আর আজ ১৬টি ছয় মেরেছেন অ্যালেন, খেলেছেন ৬২ বলে ১৩৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডটি এত দিন এককভাবে ছিল হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের। আফগানিস্তানের এ ওপেনার ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬২ রানের ইনিংস খেলার পথে মেরেছিলেন ১৬টি ছয়।
আজ অ্যালেনের ১৬ ছক্কায় সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন হারিস রউফ। পাকিস্তানের এই ডানহাতি পেসারই হজম করেছেন ৬টি ছয়, যার মধ্যে ষষ্ঠ ওভারেই ৩টি। এ ছাড়া পাকিস্তান অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদির বলে মেরেছেন ৪টি ছয়। দুটি তৃতীয় ওভারে, দুটি ১৩তম ওভারে। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আফ্রিদির এক ওভারে দুটি ছয়, তিনটি চারসহ ২৪ রান তুলেছিলেন শাহিন, যা বাঁহাতি এ পেসারের স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে খরুচে ওভার।
অ্যালেনের ১৩৭ রান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসও। কিউই ওপেনার ভেঙেছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালামের রেকর্ড। ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাল্লেকেলেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৮ বলে ১২৩ রান করেছিলেন ম্যাককালাম।
২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অ্যালেনের ইনিংসটি পঞ্চম সর্বোচ্চ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চও ছিল এক কিউই ব্যাটসম্যানের। গত এপ্রিলে রাওয়ালপিন্ডিতে ৫২ বলে ১০৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন মার্ক চ্যাপম্যান। অ্যালেন এমন ঝড় তুললেও নিউজিল্যান্ডের অন্য ব্যাটসম্যানরা তেমন কিছু করতে পারেননি। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এসেছে টিম সাইফার্টের কাছ থেকে। ২৩ বলে ৩১ রান করেছেন তিনি।
টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান এর আগে কখনো ২০৮ রানের বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি। করাচিতে ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০৮ রান তাড়া করে জিতেছিল দলটি। তাই জিততে হলে পাকিস্তানকে গড়তে হতো নিজেদের রেকর্ড। আর সেই রেকর্ড গড়ায় পাকিস্তানের বর্তমান ব্যাটিং অর্ডারে সবচেয়ে বড় ভরসা হতে পারতেন ফখর জামান। অথচ সেই ফখর যখন ব্যাটিংয়ে এসেছেন, ততক্ষণে পাকিস্তানের ইনিংসের ৪৭ বল শেষ।
ওভারপ্রতি রান লাগে ১৩–এর বেশি। কারণ, এর আগে যাঁরা ব্যাটিং করেছেন, চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা রান তুলতে পারেননি।চলতি সিরিজে মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে পাকিস্তান ওপেনিংয়ে পাঠাচ্ছে সাইম আইয়ুবকে। প্রথম ম্যাচে ৮ বলে ২৭ করা সাইম দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরেছিলেন প্রথম ওভারেই। আজ ফিরলেন ১৩ বল নষ্ট করে। রান করেছেন মাত্র ১০। বাবর আজম তিন নম্বরে ক্রিজে এলে আবারও বাবর-রিজওয়ান জুটি শুরু হয়।
তাঁরা ৩৯ রানের জুটি গড়েছিলেন বটে, তবে সেটা ২৮ বলে। ফখর এসেই রান তোলার চেষ্টা চালান। প্রথম ৪ বলেই এক ছক্কা ও এক চারে করেন ১২ রান। শেষ পর্যন্ত তিনি ১০ বলে ১৯ রান করে আউট হলে ম্যাচটি কার্যত ওখানেই শেষ হয়ে যায়। এরপর আজম খান, ইফতিখার আহমদরা ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন। বাবর আজ করেছেন ৩৭ বলে ৫৮। তাতে ম্যাচের ভাগ্য পাল্টায়নি।