বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী সুচিত্রা সেনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী সুচিত্রা সেনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
ঊনিশশ পঞ্চাশের দশক থেকে প্রায় ২৫ কোটি বাঙালির হৃদয়ে ঝড় তুলে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন পর্দার অন্তরালে বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের এক সোনালী যুগের অবসান ঘটে।

১৯৭৮ হতে ২০১৪- প্রায় ৩টি যুগ ঠিক কোন অভিমানে এ বাংলার মেয়ে সুচিত্রা নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন- শেষ পর্যন্ত তা হয়তো অজানাই থেকে যাবে ৩ প্রজন্মে ছড়িয়ে থাকা অগণিত ভক্তের। এ নিয়ে জল্পনা যতোই হোক, নিজেকে আড়ালে রেখে মহানায়িকা নিজের পর্দার ছবিটিই দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী করে দিয়ে গেছেন।

১৯৩১ সালের কথা। বাংলাদেশের পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে করুণাময় দাশগুপ্ত আর ইন্দিরা দাশগুপ্তের পরিবারে জন্ম নেয় রমা, রমা দাশগুপ্ত।
পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় কন্যা সন্তান হলেও রমার জন্মে আপ্লুত স্কুল শিক্ষক করুণাময় পুরো এলাকার মানুষকে মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন সেদিন।

শৈশব-কৈশোরের অনেকটা সময় পাবনার আলো-হাওয়াতেই কেটেছে রমার। শিক্ষানুরাগী পরিবারের মেয়ে রমা পাবনার মহাখালী পাঠশালার পাঠ শেষ করে পা দেন পাবনা গার্লস স্কুলে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই।

এরপর দেশভাগ আর দাঙ্গার শিকার হয়ে আরো অনেক হিন্দু পরিবারের মতো রমার পরিবারও পাড়ি জমায় কলকাতায়। সেটা ১৯৪৭ সালের কথা। ওই বছরেই কলকাতায় থিতু হওয়া ঢাকার আরেক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় রমার। নামের শেষে স্বামীর উপাধি যোগ করে হয়ে তিনি হয়ে যান রমা সেন।
শ্বশুরের আগ্রহ আর স্বামীর উৎসাহে রূপালী জগতে নাম লেখানো রমা হয়ে যান সুচিত্রা সেন।

চলচ্চিত্রে সুচিত্রার শুরুটা হয়েছিল ১৯৫২ সালে, ‘শেষ কোথায়’ ছবির মধ্য দিয়ে, যদিও সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। পরের বছর উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতেই ‘সুপারহিট’।
১৯৫৫ সালে বিমল রায়ের পরিচালনায় হিন্দি ‘দেবদাস’ ছবিতে দীলিপ কুমারের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পান সুচিত্রা। ‘পার্বতী’ চরিত্রে তার অভিনয়ে বিমোহিত হয় দর্শক। এ ছবি তাকে এনে দেয় জাতীয় পুরস্কার।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সুচিত্রাকে। একে একে অভিনয় করেন শাপমোচন, সাগরিকা, পথে হলো দেরি, দীপ জ্বেলে যাই, সবার ওপরে, সাত পাকে বাঁধা, দত্তা, গৃহদাহ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্তর মতো দর্শকপ্রিয় সব ছবিতে।

‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৬৩ সালে ‘মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে’ সেরা অভিনেত্রীর সম্মান পান সুচিত্রা। ভারতীয় কোনো অভিনেত্রীর জন্য সেটিই ছিল বড় মাপের প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

তিনি ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কার পান ১৯৭২ সালে; ২০১২ সালে পান পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পুরস্কার বঙ্গবিভূষণ।
দুই যুগের অভিনয় জীবনে বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে ৬০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন সুচিত্রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *